মি. বিল্লাহ একজন সমাজ গবেষক সাদা মনের মানুষ। তিনি সমাজে নানান অশান্তি, মানুষের মাঝে নানান জটিলতা, নির্দ্বিধায় মিথা বলা ও অন্যকে ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা দেখে ব্যথিত হন। মেয়ের সাথে মার্কেটে গেছেন । বিক্রয়কর্মী দাম চাইলো। বললো, এটা তার ৫০০ টাকায় কেনা। ৪৫০ টাকায় বিক্রয় করলো । তিনি দোকানিকে বললেন, বাবা মিথ্যা কথা কেন বলো? ছেলেটা বললো, স্যার এটা না বললে ব্যবসায় করা যায় না । আম পাকাতে নিষিদ্ধ ক্যামিক্যাল কেনো ব্যবহার করো এটা জিজ্ঞাসা করলেন একদিন এক ব্যবসায়ীকে । ব্যবসায়ীর জওয়াব, স্যার আপনারাতো আমের রং ভালো না হলে কেনেন না, তাই আমাদের করার কী? বাড়ির পাশে রাস্তায় কাজ করছে কন্ট্রাক্টর । কোনোভাবে ফাঁকিঝুঁকি দিয়ে কাজ হচ্ছে দেখলেই বোঝা যায় । তিনি কন্ট্রাক্টরকে জিজ্ঞাসা করলেন, বাবা কেনো এভাবে কাজ করো? তার সাফ জওয়াব, কাজ পেতেই ২৫% বিভিন্ন পক্ষকে দিতে হয়েছে । কাজ শেষ করে বিল আনতে নানানভাবে ২৫% যাবে। আমার লাভ ২৫% বাদ দিলে কাজ যা হওয়ার তাই হচ্ছে । মি. বিল্লাহ ভাবেন, মানুষের উচিত-অনুচিতের বোধ মরে গেছে সর্বত্রই । যা একদিনে মরেনি একদিনে ভালোও হবে না ঠিক, কিন্তু চেষ্টাটাই বা শুরু হবে কবে?
কোনটা ভালো কোনটা মন্দ, কোনটা উচিত কোনটা অনুচিত এ সংক্রান্ত মানুষের বোধ বা উপলব্ধিকেই মূল্যবোধ বলে । দীর্ঘদিনের ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-ভাবনা ইত্যাদির আলোকে ব্যক্তি, দল ও সমাজের মধ্যে এরূপ বোধের সৃষ্টি হয় এবং তা সমাজের মানুষদের আচরণকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে । এরূপ বোধ বা আচরণকে সমাজে মূল্যবান ও অনুকরণীয় বলে মনে করা হয়ে থাকে । মূল্যবোধের ওপর মানুষের বিবেকবোধের একটা সাধারণ প্রভাব থাকায় সকল সমাজেই এরূপ বোধ ও আচরণের একটা সাধারণ ভাবধারা গড়ে উঠতে দেখা যায় । নৈতিকতার সাথে মূল্যবোধের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান । কারণ নৈতিকতা ভালমন্দের সাথে সম্পর্কযুক্ত । যেটি করা উচিত সেটি করা এবং যা করা উচিত নয় তা থেকে বিরত থাকা- নৈতিকতার বিষয় । এই করণীয় ও বর্জনীয়র বিষয়টি মূল্যবোধ বা দীর্ঘদিনে গড়ে উঠা ধ্যান-ধারণা ও বিশ্বাস দ্বারা নিঃসন্দেহে প্রভাবিত হয়ে থাকে । শিক্ষকের কাজ হলো শিক্ষার্থীদের জ্ঞানদান ও মানুষ হিসেবে গড়তে সহায়তা করা। একজন সরকারি কর্মকর্তার কর্তব্য হলো রাষ্ট্রের স্বার্থে জনগণের কল্যাণে অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা । একজন ব্যবসায়ীর কর্তব্য হলো সততা ও ন্যায়-নিষ্ঠার সাথে পণ্য ও সেবা সরবরাহের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করা । এর সবই মূল্যবোধ থেকে উৎসারিত না হলে সেখানে বিপত্তি দেখা দেয়াই স্বাভাবিক। আইন ও আইনের যথার্থ প্রয়োগ নৈতিকতার পথে চলতে মানুষকে বাধ্য বা উৎসাহিত করে ঠিকই তবে মূল্যবোধকে সুরক্ষার জন্য সমাজে সুশিক্ষার বিস্তার, সামাজিক সাম্য ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি, কল্যাণধর্মী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি রাজনীতিকদের দৃঢ় অঙ্গীকার এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগে যত্নবান হওয়া প্রয়োজন ।